ঘুরে এলাম করমজল ও চন্দ্রমহল

প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৫ সময়ঃ ৩:০৮ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৯:০১ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিক্ষণ ডটকম:

DSC_2059

খুলনায় কয়েক দিন ধরে বাসায় থেকে থেকে কেমন বিরক্ত লাগছিল। এখানে থেকে সুন্দরবনে যাইনি এটা খুব খারাপ লাগে। সকালে উঠে বাসা থেকে হাটা শুরু করলে কেন যেন লঞ্চ ঘাটে গিয়ে হাজির হলাম বিভিন্ন ট্যুর সম্পর্কে জানতে। তখনো বেশিরভাগ লঞ্চ কোম্পানির অফিস খোলেনি। একটা অফিস খোলা পেলাম।অফিসের মালিক জানালো প্রতি শুক্রবার খুলনা থেকে তিন দিনের ট্যুরে সুন্দরবনে লঞ্চ নিয়ে যান। আবার ঢাকা যেতে হবে। তাই ভাবলাম এক দিনের ট্যুরে করমজল পর্যন্ত ঘুরে আসি।

পশুর নদীর বুকের উপর দিয়ে মংলা থেকে প্রায় ৪৫ মিনিট লাগলো করমজল পৌছাতে। করমজল গিয়ে জনপ্রতি ২০ টাকা করে টিকিট কেটে ঢুকলাম বনের ভিতর। অবশ্য এখানে বন একটা পার্ক হয়ে গেছে। বনের মধ্য দিয়ে কাঠের পথ। অনেকটা সাকোর মতো। বনের মাটিতে খুঁটি পুতে, খুঁটির উপর তক্তা বিছিয়ে তৈরি করা হয়েছে এই পথ। একে নাকি বলা হয় মাঙ্কি ট্রেইল। পথ থাকা সত্ত্বেও অনেক দর্শনার্থীকে দেখলাম বনের মাঝখানে ইচ্ছে মত হেটে বেড়াতে। এক জায়গায় কতগুলি ছেলে একটা বানরকে কলা খেতে দিয়ে ছবি তুলছে।

আমরা আর বানরকে কলা দেবার সুযোগ পেলাম না। বিদেশে অনেক জায়গায় দেখেছি এরকম পার্কে জীবজন্তুকে খাবার দেয়া নিষেধ, কেননা এতে জীবজন্তুগুলো প্রাকৃতিক পরিবেশে খাপ খাওয়াতে পারেনা। এখানে এরকম কোনও নিয়ম আছে কিনা জানা নাই।
পথের দুপাশের বনে মাটিতে শ্বাসমূলের ফাঁকে ফাঁকে অনেক ছোট ছোট গর্ত। আমরা নিঃশব্দে সামনে এগুতেই দেখি লাল লাল কাঁকড়া ছোটাছুটি করছে।

DSC_1914

আমরা একটা কম ব্যবহৃত পথে হেটে গেলাম নদী তীরে। এই পথে লোকজন কম আসায় বন কিছুট পরিষ্কার। নদীর কূল থেকে নদী আর ওপারের দৃশ্য বেশ সুন্দর। আবার আমরা বনের ভিতর ফেরত আসলাম। করমজলে আরও আছে হরিণ ও কুমির লালনপালন কেন্দ্র। আমরা হাঁটতে হাঁটতে চলে এলাম হরিণের খাঁচার কাছে। আগে হরিণগুলো বনের মধ্যে মুক্ত অবস্থায় থাকতো। কিন্তু কিছু লোক জন ঘুরতে এসে হরিণগুলোকে আঘাত করায়, হরিণগুলোকে খাঁচায় পোরা হয়েছে। আমরা প্রায় দুই ডজন কলা কিনেছিলাম। হরিণগুলোকে কলা খেতে দেয়া শুরু করার কয়েক মিনিটের মধ্যে সব শেষ।

পাশেই ছিল কুমির প্রজনন কেন্দ্রে। আলাদা আলাদা খাঁচায় আলাদা আলাদা বয়সের কুমিরের বাচ্চা। একটা খাঁচায় দেখলাম একমাসের ও কম বয়সী কুমিরের বাচ্ছা। খুবই সুন্দর। আমার মনে হয় সব প্রাণীর বাচ্চাই দেখতে অনেক সুন্দর। বিভিন্ন বয়সের কুমির দেখে মনে হলো কুমিরের বয়স যত বাড়ে, আকারে তত বড় হয়, আর চেহারা তত বিকট হয়। বাচ্চা কুমিরগুলোর পাশেই দেয়াল দিয়ে ঘেরা অনেক বড় একটা পুকুরে একটা বড় কুমিরের মাথা দেখলাম। সম্ভবত পুকুরে প্রজননের পর বাচ্চাগুলোকে আলাদা করে খাঁচায় রাখা হয়।

কুমিরের খাঁচার পর দেখলাম বের হয়ে আসার আগে আগে দেখলাম সুন্দরবনের একটা মডেল । এটা দেখে সমগ্র সুন্দরবনের বিভিন্ন অংশ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। করমজল সুন্দরবনের সবচেয়ে উত্তরের প্রান্তে, আর সর্ব দক্ষিণে হলো হিরণ পয়েন্ট। যারা লঞ্চে করে তিন দিনের ট্যুরে আসে, তারা হিরন পয়েণ্ট পর্যন্ত যায়। ওখানেই আরও প্রদর্শনের জন্য ছিল অজগর সাপের চামড়া, বাঘের কংকাল আর কুমিরের ডিম। একটা বাচ্চা মেয়েকে দেখলাম বাবার কোল থেকে খুব উৎসাহ নিয়ে এসব দেখছে। এই টেকনোলজির যুগে প্রকৃতি সম্পর্কে বাচ্চাটির কৌতূহল দেখে অনেক ভাল লাগলো।

প্রতিক্ষণ/এডি/ রানা

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

April 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  
20G